ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

চকরিয়ায় মানবিক সহায়তা: হুইল চেয়ার পেল হারবাংয়ের শিশু মোবারক

N1021

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
মরণব্যাধী ক্যান্সারে জীবন বাঁচাতে গিয়ে পা কেটে ফেলা সেই শিশু মোবারক হোসেনকে একটি হুইলচেয়ার উপহার দিয়েছেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার মানবিক সংগঠন পিস্ ফাইন্ডার। বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ভিলেজার পাড়া এলাকায় বাড়িতে উপস্থিত হয়ে শিশু মোবারক হোসেনকে সেই হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান। এসময় মানবিক সংগঠন পিস্ ফাইন্ডারের প্রধান নির্বাহী আদনান রামীম ছাড়াও সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সচেতন সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

তিনবছর বয়সের শিশু মোবারক হোসেন চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ভিলেজার পাড়া এলাকার বাসিন্দা হত-দরিদ্র দিনমজুর মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে। মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে জীবন বাচাঁতে মোহাম্মদ মোবারক হোসাইনের ডান পা অবশেষে কেটে ফেলতে হয়েছে। এ নিষ্পাপ অবুঝ শিশুটি এখন তার দুই হাতে ভর দিয়ে এক পায়ে দাঁড়াতে পারে। এই অবস্থায় দিনমুজুর বাবা ইব্রাহিম ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবান মানুষের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আকুতি জানিয়েছেন। তাঁর আহবানে অনেকে সাড়া দিয়েছেন। তদমধ্যে শিশু মোবারক যাতে হাটাচলা করতে পারে, খেলতে পারে সেইজন্য একটি হুইলচেয়ার দেওয়ার সিদ্বান্ত নেন চকরিয়ার মানবিক সংগঠন পিস্ ফাইন্ডার।

মানবিক সংগঠন পিস্ ফাইন্ডারের প্রধান নির্বাহী আদনান রামীম বলেন, আলহামদুলিল­াহ, আমাদের সংগঠনের পক্ষথেকে একশো তম হুইলচেয়ারটি পেল হারবাংয়ের ফুটফুটে শিশু মোবারক হোসাইন। এই শিশুটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে জীবন বাঁচাতে তাঁর একটি পা কেটে ফেলতে হয়। আমরা তার শৈশবটা বাড়ির চার দেয়ালে শুয়ে বসে কাটুক আমরা তা চাইনা, আমরা চাই আর দশটা শিশুর মতো সে ঘুরেফিরে আনন্দ নিয়ে বাচুঁক।

তিনি বলেন, শিশু মোবারক হোসেনের জন্য একটি হুইলচেয়ার ও তার পরিবারের জন্য একমাসের খাবার আমরা পৌঁছে দিয়ে এসেছি। গতকাল বুধবার তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান শিশু মোবারক হোসেনকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন। এখনো তার চিকিৎসা চলমান আছে। আমরা তার সুস্থতা কামনা করি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, শিশু মোবারক হোসেনকে একটি হুইলচেয়ার উপহার দিয়ে পিস্ ফাইন্ডার মানবিকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের মতো সমাজের বিত্তবান মানুষগুলো এভাবে জনকল্যাণে এগিয়ে আসলে বেঁেচ থাকার স্বপ্নটা স্বার্থক হতো বিপন্ন মানুষের জীবনে।
তিনি বলেন, চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে শিশু মোবারক হোসেনের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেওয়া হবে।

দিনমজুর মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমার ছেলে মোবারক হোসেনের শরীরে মরণব্যাধী ক্যান্সার ধরার পড়লে গত একবছর যাবত ছেলে সুস্থ হবে আশায় সমস্ত টাকা পয়সা চিকিৎসায় খরচ করে ফেলেছি। তবু চিকিৎসকরা জীবন বাঁচাতে গিয়ে মোবারক হোসেনের ডান পাটি কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।

ইব্রাহিম আরও বলেন, আমার ফুটফুটে শিশু ছেলে বাঁচতে চায়, চিকিৎসকরা বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য মোবারককে দেশের বাহিরে নিতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে, সে ক্ষেত্রে অনেক টাকার প্রয়োজন। বর্তমানে এখন আমি প্রায় নি:স্ব। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছে আমি সহযোগিতা চাই। আজকে পিস্ ফাইন্ডারের মতো মানবিক সংগঠন আমার ছেলেকে হুইল চেয়ার দিয়েছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমার ছেলে মোবারক হোসেন কথা বলতে জানলেও কথা বলেনা, কিছু জিজ্ঞাসা করলে নীরব থাকে, শুধু কান্নাকাটি করে কি যেন বলতে চায়!
সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং তাণ্ডবে আমরা বাড়িটাও ভেঙ্গে গেছে। এখন সহায় সম্বল বলতে তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। ইব্রাহিমের সংসারে চারটি সন্তান রয়েছে। শিশুটিকে সাহায্য পাঠাতে চাইলে তার  বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হিসাব নং-০২০০০১৮৮২২৮৫৫ অগ্রণী ব্যাংক চকরিয়া, আজিজনগর শাখা। অথবা ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর-০১৮৮৩৩৬৬৪১৫ সহযোগিতা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: